"দেবী" (২০১৮) : জয়া প্রযোজক প্রথমবার নিয়ে কিছু আলাপ,ফিরে দেখা,চেক ব্যাক

রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ "হে আমার বিষণ্ন সুন্দর" কবিতায় হয়তো কিছুটা আক্ষেপ নিয়েই বলেছেন:
"হে আমার বিষণ্ন সুন্দর
দুচোখে ভাঙন নিয়ে কেন এই রুক্ষ দুঃসময়ে এলে
কেন সমস্ত আরতির শেষে আজ এলে শূন্য দুখানি হাত!
কেন এলে, বিষণ্ন সুন্দর, তুমি কেন এলে?"
সিনেমার আলোচনায় কবিতা কেন ? দেবী দেখে থাকলে যদি সাহিত্য থেকে চলচ্চিত্র- কি,কেন,কিভাবে,সামর্থ্য,অঙ্গীকার,আশা কতটুকু করতে হবে -এই জাতীয় জিজ্ঞাসার উদ্ভব হয় তবে কবিতার নির্বাচিত অংশ আমার কাছে প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে। লেটস গেট আস ডিরেক্টলি অন দ্য টপিক,নো- অন দ্য সাবটপিক- সাহিত্য ও চলচ্চিত্র - কোনটি কেমন?
সাহিত্য প্রচুর কোনোটেশন নিয়ে ঘুরে বেড়ায় "হিমুর" মতো- সংখ্যা জানতে চাইলে বলতে পারি "10 thousand daffodils" এর সমান আর চলচ্চিত্রে সেই সুযোগই নেই, কারন সিনেমার জন্মই "রুপার" মতো- যার সুনির্দিষ্ট,স্বভাবিক জীবন বুঝতে শেখায় হিমু কতটা অনির্দিষ্ট,অস্বাভাবিক,মুক্ত হতে চায়,পারে,হয়ও। সেখানে যাহা ৫২ তাহা ৫২ই বই তিপ্পান্ন নহে । সোজা কথায়, সাহিত্যে 'বিষণ্ন' আকাশের রঙ 'বিষণ্ন-ই' , চলচ্চিত্রে তা হয় কালো,ধূসর কিংবা মেঘলা অর্থাৎ নির্দিষ্ট, সীমিত কিন্ত উন্মুক্ত,খোলা নয়। দেবীর এডাপ্টাশন নিয়ে যত অনুযোগ,তা এই গন্ডির মধ্যেই আটকা পড়ে এখানে ওখানে টক্কর খায়,খাচ্ছে। ব্যাপারটা কি তাহলে কোন সীমাবদ্ধতা? আমার মতে না, এটা দেবীর নামক সিনেমার ধর্ম, ডিরেক্টরের সিগনেচার, চরিত্রসমূহের এক্সিলেন্স ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়ের একটা আর্টিকুলেটেড রূপ বা যেই ফিলিংস/সমূহ নিয়ে আপনি সিনেমা হল থেকে বের হয়েছেন,ভাবছেন ভালো বলবেন না খারাপ বলবেন বা আদৌ কিছু বলবেন কিনা সেইটা।ধরা যাক, 1 লক্ষ লোক দেবী পড়েছেন সমগ্র বাংলাদেশে: আপনাকে বলা হলো এই ১ লক্ষ্য লোকের দেবী পড়ে যেই ফিলিংস হয়েছে, রানুর পায়জামার ফিতা তারা যেই কালার ভেবেছে, মিসির আলীর শার্ট কোচকানো না মসৃন, তার বাসার ইন্টেরিয়র ইত্যাদি এইরকম হাজারটা ডিটেইলস এক করে,মিল করে,ঠিক রেখে একটা স্ক্রিপ্ট লিখেন। এই পর্যন্ত পড়ে আপনি বুঝে গেছেন কাজটা শুধু অসম্ভব নয়,অবাস্তব।তবে সাহিত্যের এডাপ্টাশন কি রানুর ভুতদেরমতো ব্যাখ্যার অতীত কোন প্রসেস? উত্তর:না।তার জন্য দরকার মেঘের আন্দাজ বুঝে বৃষ্টির ফোরকাস্ট অর্থাৎ শিল্পের এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে যাওয়ার জন্য যেই transcendental ফোর্স দরকার হয় তার ব্যবহার। কোত্থেকে পেলুম এই ফোর্স,কি তার পরিচয়? বিখ্যাত সাহিত্য কর্ম থেকে ততধিক বিখ্যাত চলচ্চিত্রে আপনি সেই ফোর্সের দেখা পাবেন,টের পাবেন, বিখ্যাত সাহিত্য থেকে অখ্যাত চলচ্চিত্রে আপনি সেই ফোর্সের অভাব অনুভব করবেন সেটাই।ইউ মে গুগল :সিনেমাস ফ্রম নভেলস,স্টোরিস ইত্যাদি।(কোনো কিছুর নাম নেয়া বিপদজনক,শেষে মানহানির মামলায় ফেঁসে যাবো, দেশে আজকাল প্রচুর মানহানি হয়,মান থাকুক আর নাই থাকুক) দেবী কোন শ্রেণীতে পরে,অখ্যাত না বিখ্যাত এডাপ্টাশন? আপনি সিনেমা দেখে থাকলে রুদ্রের কবিতা আওড়াবেন একটা সুখ মিশ্রিত বিষণ্ন সৌন্দর্য্য নিয়ে ভেতরে ভেতরে।
তবে, আমি দেবীকে নিয়ে যেই ব্যাপারটা বলবোই সেইটা হচ্ছে, দেবীর মার্কেটিং মেইহেমের , যেইটার ইফেক্টিভনেস নিয়ে কোনো প্রশ্ন না থাকলেও এথিকাল কিছু প্রশ্ন যেমন "দেবী সবার জন্য" টাইপ সিনেমা- আমি এটা মানিনা। গল্পটা যেরকম সবার,সিনেমাটা নয়।
অডিয়েন্স ও জনরা এই দুই পট মাথায় রেখে বলছি। অর্থাৎ এর একটা রেটিং থাকা দরকার ছিল বয়সের,যেরকম নির্দেশনা থাকে M, PG,PG-13এটা নাই। শুধু ধূমপান করা যাবেনা এইটা আছে। এছাড়া সবার জন্য সিনেমা-এইটা বললেই অনেকে পারিবারিক সিনেমাও ভাবেন, সেই ক্যাটাগরিতে দেবীর অবস্থান - আবছা।(এই অনুভূতির মালিক "সিনেমা দেরীতে" , ব্যাপারটা সেখান থেকেই ভাবা শুরু শিখেছি)।
একটা ব্যাপার লক্ষ্য করার মতো, এই ফিল্ম দেখার আগেই হুমায়ূন রোমান্টিসিজম এ ভোগা আমরা দেবী নিয়ে কোনো সমালোচনা বা অন্য রকম আলাপ যেন blasphemous কোন ব্যাপার বলে গণ্য করছি। যেন সরকার সমালোচনার মতো গর্হিত কাজ, করলেই "আপনার জন্য এই সিনেমা না" মতো ডিজিটাল ফেসবুকিয় এক্টে ফাঁসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়।সমালোচনা ও সিনেমা- যেন ট্রাফিক আর ট্রাফিক সিগনাল - খেয়াল না করে আগে বাড়লে,একটা না খেয়াল করে আরেকটা চালালে প্রাণঘাতী হতে পারে, চোখ হারাতে পারেন, এমনকি ধাক্কা খেয়ে কমাতেও চলে যেতে পারে ।তখন আর কিছু দেখলেও কিছু বলার মতো অবস্থা থাকবে না, শুধু বুঝতে পারবেন কিছু একটা হচ্ছে,আপনি সেই কিছু একটার অন্ধকার সাগরে মৃতপ্রায় হয়ে বেঁচে থাকবেন।
"দেবী" সিনেমার একটা জিনিষ লক্ষ্য করার মতো যে ,দর্শক গন যেন অটো সেন্সরশিপড মানে একপলক ফেলে দেখা আরেক পলক ফেলে "হুম,বেশ বেশ" বলা। এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কে দিয়েছে এরূপ অটো-সেন্সরশিপের মোটিভেশন? অবশ্যই জয়া আহসান- নিঃসন্দেহে তার প্রযোজক জীবন বেশ হাঁকডাক দিয়ে শুরু হলো।
এতো বিতং করলাম কারন ফিল্মডা দেইখা আমার শইললের মধ্যে কিরকিরা উঠছে- এই কিরকিরার কারন খুঁজতে খুঁজতে দেখলাম, পুরা সিনেমায় মিসির আলী যেমনে খালি বিতং ই কইররা গেলো, কোনো "মিসির আলী বাজি" করলো তো নাই বরং কমোডে লাগাইল গোলাপ, কইলো হাসির জুক্স, -তাই এই অল্প বিতং করার রাইট আমি রাখি কারন আমার ব্যাপারটা বোঝা দরকার। কি বলেন?
এবার আসি কি পেলাম,কি পেলাম না,কি পাওয়ার কথা ছিল,কি দেখার কথা ছিল,কি দেখলাম না। সবার আগে আসি, কি শুনতে পেলাম: রানুর অডিটোরি হ্যালুসিনেশনের জায়গাগুলোতে সাউন্ড শুনে বেশ লেগেছে।মনে হালকা আগ্রহের উদ্রেক হয়েছিল কিন্ত ভিজুয়াল বারে বারেই ব্যর্থ হচ্ছিল শব্দের সাথে ওয়ান-টু পাস খেলে ঠিক স্কোর করতে- যেমনটা হইসে রিয়াল মাদ্রিদ থেকে রোনালদো চলে যাওয়ার পর। তবে নানান জায়গায় আলোর ব্যবহার চমৎকার।
মনে রাখার মতো দৃশ্য আছে কোনো- এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যেয়ে দেখলাম সেই প্রত্যেক মনে রাখার দৃশ্যে কিভাবে কিভাবে যেন জয়া আহসান হাজির হয়ে যাচ্ছেন। আর টুকটাক কিছু জায়গা,যেমন পেঁচার সহিত জয়া, ছাদের উপর জয়া, সুন্দর করে শাড়ি পড়া জয়া, বান্দরের পাশে জয়া,পার্কের মধ্যে ট্রেনের সিটে বাউন্সি জয়া ইত্যাদি ইত্যাদি- বাকি কি দেখলাম সেই বিষয়ে আসছি,আগে জরুরি একটা আলাপ সেরে নেই। মানে,আরেকটু বিতং করবো।( হুমায়ুন স্যার মাফ করবেন, আপনার বিতং শব্দটারে আমি ভালো পাইসি)। অর্থাৎ দেবী যতোটা না মিসির আলীর,তার থেকে বেশি জয়ার।
ধরেন, সাহিত্য হচ্ছে বুফে,আর সিনেমা হচ্ছে সেট মেনু।একটায় কল্পনার সীমানা আকাশের সীমানার মতো উদার হতে বলে,অন্যটায় বলে একটা চমৎকার সাজানো গোছানো কক্ষের "ইন্টেরিয়র" দেখো,দেখে কল্পনা করতে পারলে করো-কারন এর মালিক আগে থেকেই তৈরি করে রেখেছে সবকিছু। আমাদের দেশের সেট মেনুতেও মাঝে মাঝে অপশন থাকে হয় চিকেন বা বিফ প্রেফার করার,দেবীতে সেইটা নাই বললে খুব বড় ভুল হবে না। তবে বুফে থেকে সেট মেনুতে, সাহিত্য থেকে চলচ্চিত্র, দেবী কাগজ থেকে দেবী সেলুলয়েডে রূপান্তরের প্রক্রিয়াতে সেই ট্রান্সসেনডেন্টাল শক্তির কোনো বিচ্ছুরণ আমি দেখি নাই। সারাক্ষণই আমি একধরনের আশ্বস্ততা নিয়ে সিনেমাটা দেখেছি, আমাকে এক মুহূর্তের জন্যও চঞ্চল চোখ বড় বড় করে কিছু দেখাতে পারেন নাই, আমার মন চঞ্চল হইতে পারে নাই।ন্যারেটিভ জানা সিনেমাতেও যেই চোখ কোটর থেকে বাইর করা মোমেন্ট থাকে সেইটার কথা বলতেসি, এইরূপ না ফিল করে থাকলে আমার কিচ্ছু করার নাই-আমি নবী না,আমি সিনেমার উম্মত বড়জোর-সিনেমা দেখি,দেখে তুলনা করি। এবার ফিরে আসি আবার কি দেখে কেমন লাগলো সেই পেন্ডিং আলোচনায়:
সোজা সাপটা কাট দেখতে দেখতে বিরক্ত বোধ করেছি , বেশির ভাগ সময় ভিজুয়ালি আন এপেলিং মুহূর্ত গুলাতে কমিক রিলিফ আসতে ছিল গাবতলীর জ্যামে ডি-লিংক বাসের এক পা দুই লা আগানোর মতো।। তবে কয়েকটা বিষয়:
১) শব্দের প্রক্ষেপন বিশেষত রানুর অস্থির সময়ের সাথে এসসিয়েটিং এমবিয়েন্স (যেইটার কথা আগেও বলসি একবার),
২)একটা ম্যাচ কাট(রানু ছোটবেলায় ভাঙা মন্দির থেকে রানু বড়বেলায় রাস্তায় যে ঝপাং করে কাট টা হয় সেইটা,দেখেছিলেন,মনে আছে কি?), ৩)খালি পার্কে অনুপমের গানের সাথে জয়া-অনিমেষের খুনসুটি
৪) মিসির আলীর বাসায় খোলা জানালায় রানু,মিসির আর অনিমেষের তিনজনের অবস্থান ইত্যাদি জায়গায় মুগধ না হলেও খুশি খুশি লেগেছে, মনে হচ্ছে এইতো আসলো অনম বিশ্বাস,আরেকটু,আরেকটু।তবে এক দুইটা এরকম ঝিলিক তো সিনেমা না , সিনেমা সামগ্রিক ঝিলিক- অডিও ভিজুয়ালের মিলিত অর্গাজম।আমার সেইটা আসে নাই,হয় নাই।পুরা সিনেমায় আমারে ব্লু বলড করে রাখলো জয়া-চঞ্চল-শবনম-অনম। আগেই বলসি, এখন তো সিনেমার সমালোচনা করা একধরনের ব্লাসিফেমাস ব্যাপার , এর সাথে টেনে আনা হয় তেল তেলে রকমের "ভাই, দেশের বাজেট,দেশের প্রেক্ষাপট,দেশের অমুক,দেশের তমুক,একটা বানায়ে দেখান"...কি বলবো,এই সব খয়রাত গীত আসলে স্বর্ণ যুগের সিনেমা সমূহের প্রতি একধরনের অবজ্ঞা,সরাসরি অস্বীকার যে ,তারা ঐ সব প্রতিকূলতা ডিঙায়ে পারেন নাই,এরা পারসে। এরপরে আর আমার কথা বাড়ায় লাভ নাই। সেই কম্পারেটিভ আলাপ আরেকদিন দিবো, বাজেট ব্রেক ডাউন বনাম সিনেমা, সময় বনাম সিনেমা। পিরিয়ড।।
ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট নিয়ে একটা সিম্পলের মধ্যে গর্জিয়াস আলাপ শোনেন। সিনেমার একেবারে শুরুতে, গাড়ির মধ্যে বসে থাকা ঝিমাইন্য ফারিয়া আর গাড়ির বাইরে জ্যোতিষরাজ জয়া দুইজন কমপ্লিট কন্ট্রাস্ট। ফারিয়া- ইন্ট্রোভার্ট, বন্ধুবান্ধব, বিশেষ কোন মানুষ নাই,ফেসবুকে প্র পিক নাই, খুব লাজুক, গায়ের রঙ নিয়ে আগলি এসিয়ানদের মতো ক্লাসিকাল হীনমন্যতায় ভোগা ফারিয়া কে জয়া মোটিভেশন দেয় যে নিজে ঐ সব দোষ কিংবা সংকীর্ণতা(!) থেকে মুক্ত। এইসব দৃশ্যে আমার কোনো সমস্যা নাই,সমস্যা আছে ফারিয়া - জয়া অর্থাৎ নীলু-রানুর মধ্যকার কেমিস্ট্রি অত্যন্ত তাড়াহুড়োয় জমানো হয়েছে এইদিকে। ফলে চরিত্র জমে খির হওয়ার যে ব্যাপারটা আছে,সেইটা নাই, নীলু চরিত্র কে বলি দেয়া হয়েছে প্রথম দৃশ্যেই। নিলুর মতো কম কথা বলা মানুষের হটাৎ রানুর সাথে একদম খুললাম খুল্লা ইন্টিমিসি। যাহা হোক, উহারা অতঃপর ক্রমে ঘনিষ্ঠ হতে থাকে, একদিন রানু নীলুকে চা খাওয়ায়,চায়ের মধ্যে সিউর পিনিক ছিল কেননা এরপর রানু চায়ের কাপ খুঁজে না পেয়ে নীলুকে ফ্যাপর দিয়ে তাকে তার প্রথম ডেটে নিতে বলে( একচুয়ালি এই রিয়ালিটি শিফটিং আমার ভালো লেগেছে ফান এপার্ট)। বেশ নামি একটা রেস্টুরেন্টে রানু বসে থাকে,সাথে গেটিস নীলু।ওদিকে ইরেশ দুইজন কে একসাথে দেখে চুনা খায়, তার প্ল্যান ছিল একা রেস্টুরেন্টে নীলুকে সেটিং দিবে... যাই হোক,পরে সে এইসব আলাপ দেয় নীলুকে সে কেন একা আসেনি।এই "একা" শব্দটি এখানে দারুন গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, লক্ষ্যনীয় কিভাবে নীলু চরিত্রটি তার খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসছে ,এবং কিভাবে রানু প্রত্যক্ষ ভাবে এই পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণ করছে। ইন্ট্রোভার্ট,লাজুক, কোন বন্ধু না থাকা,প্রফাইল পিকচারে ওয়ালপেপার দিয়ে থাকা নীলু হটাৎ করেই ইরেশ কে হাত ধরতে দেয় এমনকি তার বাসাতেও যেতে রাজি হয়(আমি গল্পের ব্যাপারে আলাপ করছি না আগেই মনে রাখুন,আলাপ করছি দৃশ্যায়ন নিয়ে)। সিনেমার একেবারে শেষে, রানুর স্পিরিট জানালা গেলে চলে যায় নিলুর কাছে(জানালার পর্দা গলে যাওয়ার ব্যাপারটা খুব পুওরলি সিম্বলিক), ঠিক যেভাবে অনেক আগে রানুর সবচেয়ে দরকারের মুহূর্তে একটা স্পিরিট তার ভেতর চলে আসায় সে পুরো ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে জালালুদ্দিন কে ছেক দিয়ে বেঁচে গিয়েছিলো,রানুর মধ্যে প্রবেশ করা স্পিরিটের নভেম্বর আপডেট আসায় সে ছুড়ে মারে তারকাটা বা গজাল (সিজি ভাল্লাগে নাই,তাই রাগ উঠাইলাম)। এখানে সবচেয়ে লক্ষ্যনীয় ব্যাপার, সিনেমার একেবারে শেষে নীলু তার আগের খোলস ছেড়ে এক সম্পুর্ন নতুন মানুষ,নীলু যেন এক নতুন রানু, এই যে তার ট্রান্সফর্ম, তার সামগ্রিক পরিবর্তন এইটা দেখানোর জন্য প্রয়োজনীয় স্টেপ বাই স্টেপ, ঘন ,ঠাসবুননির ভিজুয়াল কই? একটা দুর্ঘটনা থেইকা নিলুরে বাঁচাইয়া,একটা গোপন স্টোরি কইয়া,একবার চা খাইয়া,একবার রেস্টুরেন্টে জাইয়া এতো অসম্ভব দ্রুততার সাথে সিনেমার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের বিকাশ পরিচালক দেখিয়েছেন - তখন সন্দেহ করতেই হয় তিনি ভরসা করেছেন দেশের হুমায়ুন প্রি-অকুপাইড দর্শকের উপর। এছাড়া এতো অযত্নের কারন কি? এতো গুরুত্বপূর্ণ এক চরিত্রের ট্রান্সফর্মেশন এতো নিদারুণ অবহেলায় করা কি প্রশ্নবিদ্ধ করেনি পুরো সিনেমার বিশ্বাসযোগ্য এডাপ্টাশন ?
আরেকটা জিনিষ কিছুতেই রিলেট করতে পারি নাই,সেইটা হচ্ছে কুব্রিকের শাইনিং সিনেমার সেই টুইন ডটারের ট্রিবিউট।এর সাথে পুরা সিনেমার দৃশ্যত কোনো ধরনের এসোসিয়েশন আছে বলে আমার মনে হয় নাই।কারন দুইটা সিলোহুট ছোট মেয়ের ভৌতিক ভিজুয়াল অবশ্যই রানুর সাইকিক টেনশনের রিপ্রেজেন্টেশন হইতে পারে না যতক্ষন না এর সাথে আলোচ্য সিনেমার সলিড কোন কানেকশন থাকবে বা কানেকশনের প্রজেকশন থাকবে,হিন্ট থাকবে।আমি জাস্ট দুঃখিত হইসি কোনো ধরনের এসোসিয়েশন না পায়া, কি হইলো এই বিখ্যাত সিনের রি-প্রোডাকশন কইরা যদি না বর্তমান সিনেমার সাথে এর কোনোরকম সম্পর্কই না থাকে এক্সসেপ্ট রানু ভয় পাইসে,তাই দেখসে ছাড়া? বলেন আমারে? ঘি বাদাম দিলে যদি হাজির বিরানি হয়তো,তাইলে তো সিয়াম ও রানতে পারতো।পারে নাই তো,কি বলেন?
ওভার অল ১০ এ ৫, না যান ৬। এক্সট্রা ১ দিলাম একটা কারন একটা বেশ নামি রেস্টুরেন্টে গিয়া ইরেশ যেভাবে পাড়ার চায়ের দোকানের মতো হাক দিয়ে চা খেয়ে প্রথম ডেটেই মাইয়ার বাপের লগে দেখা করতে চাইয়া আলোর বিপরীতে সিলহউৎ ছবি তুইল্য যখন কইলো ভালো আসছে ,এরপর যখন গাড়ি হাকাইয়া নিজের ইনস্যানিটি প্রমান করতে ফারিয়ার পায়জামার ফিতার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করে,নিজের হাত নিজেই ব্লেড দিয়া কাইট্যা ছিল্ল্যা লবন ছাড়াই নিজের ব্লাডগরুপ টেস্ট করে নিজেকে একটু সাইকো দেখানোর চেষ্টা করে ফারিয়াকে একটা এমসিকিউ জিগ্যাসা করে যে তাকে কিভাবে মারবে- তখন ওরে বেশ কিউট লাগসে। তাই বোনাস ১।

একনজরে দেবী
ধরন            :ড্রামা, মিস্ট্রি, থ্রিলার, হরোর
পরিচালক    :অনম বিশ্বাস

লেখক         :হুমায়ূন আহমেদ ( উপন্যাস), অনিমেষ আইচ ( চিত্রনাট্য )
অভিনয়ে     :জয়া আহসান, চঞ্চল চৌধুরি, অনিমেষ আইচ, শবনম ফারিয়া, ইরেশ জাকের
স্থান/ভাষা    :বাংলাদেশ, বাংলা
দৈর্ঘ্য           :১০৭ মিনিট, কালার
মুক্তিকাল    :১৯শে অক্টোবর, ২০১৮



খোদা হাফেজ!

Comments

Popular posts from this blog

L F D: ঢাকার সিসিফাসের গল্প ( Live From Dhaka )

ভারত অস্কারে পাঠাচ্ছে গালিবয়ঃ সেরা সিনেমা বনাম ফিল্ম সার্কিট পলিটিক্স