L F D: ঢাকার সিসিফাসের গল্প ( Live From Dhaka )


সিনেমা আলাপ পড়ার আগে দুটি প্রশ্ন মাথায় রাখে

১) লাইভ ফ্রম ঢাকা রঙ্গিন না হয়ে সাদা-কালো কেন ?

২) সাজ্জাদ খোড়া কেন? এটা কি একটি অতিকায় মেটাফোর?

স্টাইলিস্টিক আয়োজনে অথবা কালার গ্রেডিং/বাজেট বাচানোর উদ্দেশ্যে সাদা কালো গ্রেইনি লুক । কোনো দ্বি-মত নেই। তবে বুদ্ধিমান দর্শক আরেকটু ভেতরে যাবেন, স্টাইলিস্টিক এর সাথে থিমাটিক কোনো সম্পর্ক আছে কিনা- কেন আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ এই কালার গ্রেডিং বেছে নিলেন? ওয়েল, আমার ব্যাখ্যা হচ্ছে, সিনেমা যেই গলিতে শুরু হয়, একই রকম আরেকটি গলিতে শেষ হয়। শুরু এবং শেষ- দুই ক্ষেত্রেই সাজ্জাদের অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই-বরং অবনতি স্পষ্টত প্রতীয়মান। অর্থাৎ একধরনের অশুভ পাকে সাজ্জাদ বন্দি হয়ে আছে, কিছুতেই বের হতে পারছে না, জীবনে নিয়ে আসতে পারছে না প্রয়োজনীয় বদল, দেখতে পারছে না দরকারি রং-সমূহ। যেই সাজ্জাদ মাদকাসক্ত ভাইয়ের ঘর গুড়িয়ে ফেলে, সে-ই আবার ঘর গুছিয়ে আগের মতো করার চেষ্টা করে। ঠিক এখানেই সাদা-কালো কেন- সেটির একটা ব্যাখ্যা দেয়া যায় যে, যেহেতু সমস্ত আয়োজন সাজ্জাদের প্রতিকূলে, এখানে সবকিছু স্থির, পশ্চাদমুখী, পুরো ১ ঘন্টা ৩০ মিনিটেই একটা সেন্স অফ রিগ্রেট, সেন্স অফ নেগাটিভিটির চোরাস্রোত বইতে থাকে, জীবন চলতে থাকে একঘেয়ে অবনতির সিম্ফোনিতে, এক ধরনের ডিস্টোপিয়ান নাড়া- চাড়ায়-এই যাবতীয় ব্যাপারগুলো আমদানি করার জন্যই লাইভ ফ্রম ঢাকা সাদাকালো।
সাজ্জাদের বার বার কেন বমি আসে জানেন? ? কারন সেতার সাথে থাকতে থাকতে রেহানাও বমি করায় আক্রান্ত হয়। কারন তারা যেখানে থাকে সেইটা একটা দোজখের গর্ত, , একটা বিশাল ফাপর, একটা ভরপুর ডিসটোপিয়া। তার চারপাশের যাবতীয় জীবন ধারনের কোনো ব্যবস্থা- শেয়ার বাজার, রাশিয়ার ভিসা, মালয়সিয়া ভ্রমণ- কোনোটাই তার হজম হয় না। তাই সে ক্রমাগত বমি করে, বমি করতে করতে সে সিদ্ধান্ত নেয়, এই অসুস্থ চক্র থেকে পলানো ছাড়া তার আর কোনো গতি নাই- সে না পারবে সিস্টেম বদলাতে, না সিস্টেম তার জন্যে বদলাবে। তাই সে সবচেয়ে প্রবৃতিজাত কাজটাই করে, পলায়ন। সে পালাতে পেরেছিলো কিনা, সেইটা সিনেমার শেষে দেখানো হয় নাই। দেখানোর প্রয়োজনও নাই। কারন পালাতে পারা বা না পারার থেকে জরুরি ব্যাপার হচ্ছে, সাজ্জাদ শেষ পর্যন্ত রনে ভঙ্গ দেয়। আর পলানোর গল্পই হচ্ছে লাইভ ফ্রম ঢাকা।
ছবির মূল চরিত্র তিনজন – সাজ্জাদ, রেহানা আর মাইকেল। মাইকেল মাদকাসক্ত- সাজ্জাদের ওপর মানসিক ও আর্থিক ভাবে নির্ভরশীল। সাজ্জাদ- পায়ে জখম,অসম্ভব মনের জোড়, মোটামুটি ব্যর্থ এক যুবক - প্রাথমিক ভাবে রেহানার কাছে মানসিক অবলম্বন খুজলেও পরবর্তীতে রেহানা হয়ে দাঁড়ায় অর্থনৈতিক বা প্রকারান্তরে তার মুক্তির সনদ। সেই সনদ ভালো না মন্দ, সেটি কিসের ফলাফল- তা বুঝার ক্ষমতা, ইচ্ছা ও দক্ষতা সাজ্জাদ হারিয়ে ফেলে। এই কারনে অন্তঃস্বত্তা বান্ধবীকে কে ফেলে মালয়েশিয়া যাওয়ার পরিকল্পনার করার জন্য সাজ্জাদের কোনো দোষ কিংবা দায়িত্ব –কোনোটিই নেই। কেননা সে রাষ্ট্রের এপারেটাসের ফলাফল, এখানে তার কিছু করার নেই। সমাজ-দেশ কিংবা দেশের মানুষ তাকে বাধ্য করেছে এই পর্যন্ত আসার, যদিও স্টক মার্কেটের ফুটেজ আর প্রাইভেট কার পোড়ানোর শট( বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলাপান এমনে পোড়ানোর কথা না, খুবই ডিস্টার্বড হইসি দৃশ্যটা দেখে ) ছাড়া শক্ত কোনো কামড় দিতে পারেনি পুরো সিনেমা। অবশ্যম্ভাবি পরিণতিতে, পুরো সিনেমা জুড়ে নানান সামাজিক বিষের বেদনা উঠিয়ে, শেষ মেষ সাজ্জাদ সহজাত প্রবৃত্তির পলায়নের প্যারাসিটামলই গলাধকরন করে।এইবার এই তিন চরিত্রের ডায়নামিক্স একটু বুঝা যাক। মাইকেলের শেষ ভরসা তার একূল ঐকূল দুইকূলে একমাত্র বড় ভাই সাজ্জাদ। সেই সাজ্জাদ বেঁকে বসে, তাকে জীবন যুদ্ধে মুফতে টেনে নেয়ার ব্রত সে অস্বীকার করে। মাইকেল এর পর কি হবে ভাবতে না পেরে ওভারডোজ করে- এই ওভারডোজ আসলে ড্রাগে হয় না, হয় যাবতীয় যন্ত্রনায় বিহ্বল কোনো মানুষের রিয়ালিটি থেকে পালানো। আমার একমাত্র আশ্রয় আমার ভাই আমার সাথে আর নাই, আমি এখন কি করবো, কোথায় যাবো- এই ভাবনা থেকে স্বেচ্ছা বিদায় কারন এই “স্পেইস” তাকে ভোগাচ্ছিলো। এদিকে, সাজ্জাদের সাথে রেহানার যে বিনিময় সম্পর্ক- সেটায় ধীরে ধীরে পরিবর্তন ঘটে। প্রেমিকা থেকে রেহানা হয়ে পড়ে সাজ্জাদের শেষ ভরসা। এইখানে সাজ্জাদ যেমন মাইকেল কে না করে দেয়, রেহানা সাজ্জাদ কে না করতে পারেনা, ব্যাঙ্ক থেকে লোনের ব্যবস্থা করে। সাদাকালো ছবিতে একমাত্র রঙ্গীন চরিত্র রেহানা, যে স্বপ্ন জিইয়ে রাখার বিরল ক্ষমতার অধিকারিণী, যে নানান বাহ্যিক নানান চাপেও অন্তর্গত পরিবর্তন রোধ করে রাখতে সক্ষম, যে এখনো ধরে রেখেছে খুব আটপৌড়ে এক স্বপ্ন। কিন্ত বাধ সাধে সাজ্জাদ নিজেই, মাইকেলের মতো এখানে পাওয়ার রিলেশনশিপ কাজ করে না, শিফট করে, ক্ষমতাটা চলে যায় যে সাহায্য করে তার কাছ থেকে যে সাহায্য নেয় তার কাছে। সাজ্জাদও মাইকেলের মতো পালায়, তবে সে কি মাইকেলের মতোই মারা যায়? যায়, সাজ্জাদও মারা যায় তবে কেউ তার জানাজা না পড়লেও দর্শক ঠিক ই তার জানাজা টের পায়। সে এইবার রেহানাকে ত্যাগ করে, বাহ্যিক চাপে সে অন্তর্গত পরিবর্তন রোধ করার শক্তি হারিয়ে ফেলে যেটার একটা ফেমিনিস্ট রিডিং আপনি চাইলে দিতে পারেন, কেউ আপত্তি করবে বলে মনে হয়না। যথেষ্ট সাবমিসিভ একটি চরিত্র রেহানা, সিনেমায় যখন সে একমাত্র সিদ্ধান্ত নেয় ,সেটাও যে এক অপরিনামদর্শি সিদ্ধান্ত, সেটা কি তার টেকেন ফর গ্রান্টেড নারী পরিচয়ের কারনে নাকি যখন চারিদিকে রঙের ভীষণ অভাব তখন কেউ না কেউ নিজের ভেতর রং পূষে রাখে সেই কারনে - সেটা নিয়ে চায়ের টেবিলে ঝড় উঠতেই পারে! এমনকি সাজ্জাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারনে রেহানার প্রতি তার আচড়নের যে প্যাটার্ন- সেইটা নিয়াও হইতে পারে বাহাস, বলতে পারেন কেন রেহানা বলে,”কেন শুনবো তোমার কথা/” আমার কাছে এটা যেন শুনতে লাগে,” কি আছে তোমার যে তোমার কথা শুনবো?”।আবার, মাইকেল ও সাজ্জাদ ডিসফাংশনাল হইলেও কেন রেহানা ফাংশনাল-একটা সোবার ব্যংকের চাকরি কেন সাজ্জাদ করে না? যদিও এইসব প্রশ্নের কোনো উত্তর নাই।কতকিছুই হইতে পারে। কারন দিনশেষে এইটা একটা সিনেমা, একটা বিশাল চিত্রের খন্ডিত অংশ- ওতে মেঘ দেখা গেলেও পাশের রৌদ্র নাও দেখা যেতে পারে, দেখা না যাওয়াটাই স্বাভাবিক। এক ফ্রেমে কি সব জায়গা হয়?
আরেকটা ব্যাপার আলাপ না করলেই না, সেইটা হচ্ছে রিপিটেটিভ সেটিং- অর্থাৎ কেন ঘুরে ফিরে বার বার আমরা একই ফ্রেমে ঘটনা গুলো দেখছি? সাজ্জাদের গাড়ী, ফ্ল্যাট, ট্রাভেল এজেন্সির বেসমেন্ট, রেহানার অফিসের সামনে- কেন কেন কেন? ওয়েল, এই প্রশ্নের উত্তর আমি এক কথায় দিতে পারবো না। এখানে কন্টেন্টের সাথে ফর্মের একটা সরাসরি সম্পর্ক আছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন যে কারন তা হচ্ছেঃ সিনেমাটি যেখানে শুরু সেখানেই শেষ- এই ব্যাপারটির মাঝে পুরো প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে। ব্যাখ্যা করছি।
এই সিনেমা কেন্দ্রিভূত ভাবে কোনো সামাজিক, রাজনৈতিক কিংবা ধর্মীয় ক্রিটিক নয়। কেননা এটি ব্যক্তিকে নিয়ে এতোটাই কেন্দ্রিভূত যে বিসিএস ওরাকলের চিকায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রশাব করার দৃশ্য (দুই সেকেন্ড কি তিন সেকেন্ড) , শেয়ার মার্কেটের স্টক ফুটেজে পুলিশ কর্তৃক জনগন কে প্রহার করার ফুটেজ, সেই আমলে সরকার কে ছিলো কিংবা, মাইকেল কেন কোন কারনে কিসের অভাবে ওভারডোজ করে, কোন প্রেক্ষাপটে ব্যংকে চাকরি করা স্বনির্ভর নারী এবোর্শন করাতে যায়- এই সব জটিল আলাপের সরল কোনো উপসংহার নাই। এমনকি অবৈধ অভিবাসন নিয়ে কিছু থাকবে বলে আশা থাকলেও, সেইটা একটা বড় জাহাজের শট দেখিয়েই পরিচালক ইতি টেনে দিইয়েছেন। তাই মোটা দাগে, এটি খুব সাবধানে, গা বাচিয়ে কিছু বিরোধী মনোভাব দেখালেও কোনোটাই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে ব্যর্থ বলে মনে হয়েছে। এটার ব্যাখ্যা হতে পারে,, ব্যাক্তির কাছে সব গৌন যখন সে ভালো থাকেনা, তখন এইসব তুচ্ছ। তাই, আপনিই বলতেই পারেন লাইভ ফ্রম ঢাকা ছোট ফ্রেমে নিহিলিজম কে প্রমোট করে যে, জীবনের আসলেই কোনো অর্থ নেই, এটা ইন্দুর বিলাই খেলা। এই খেলায় হয় আপনি সাজ্জাদ, না হয় মাইকেল, কিংবা রেহানা। । আরেকটু গভীরে যদি যেতে চান, আপনি বলতে পারেন, সাজ্জাদ বা মাইকেল হচ্ছে ভ্লাদিমির বা এস্ট্রাগন, ঢাকা হচ্ছে তাদের থিয়েটার অফ এবসার্ড আর একটা ভদ্র, স্বাভাবিক,সুন্দর, অর্থ(!)পূর্ন জীবন হচ্ছে গডো। তাই, সাজ্জাদ সিসিফাসের মতো একবার রাশিয়া যেতে চেয়ে একদম শীর্ষে উঠে ১ লাখ টাকা লস করে পড়ে যায়, আবার সে যাত্রা শুরু করে, এবার মালয়েশিয়া। এই উঠা-নামা-রিপিট সে শুরু করেছিলো শেয়ার মার্কেট দিয়ে।
আপনি যদি খুব খেয়াল করেন, তবে দেখতে পাবেন, সাজ্জাদের “represent” লেখা জ্যাকেট টা মাঝে দিয়ে আর পড়ছে না, মাঝে তার জ্যাকেটে লেখাটা উধাও হয়। কেন ? ব্যাখ্যা করিঃ কিসের রিপ্রেজেন্টেটিভ সাজ্জাদ? একটা এবসার্ড জগতে সাজ্জাদ আরোহন করতে না করতেই পড়ে যায়। বার বার সে এমন করে । এর কোনো শেষ নেই, শুরুও নেই, শুধু চলা আছে। এমনকি রাশিয়ার ভিসা প্রসেসিং এর ট্রাভেল এজেন্ট কিংবা সুদখোর পাওনাদার- এরা অত্যন্ত শান্ত সমাহিত ভঙ্গিতে সাজ্জাদ কে থ্রেট করে। এই শান্ত ধীর স্থির ভাবে থ্রেট করার ব্যপারটিও আমাদের আর্গুমেন্ট কে সাপোর্ট করে যে, সাজ্জাদ যতোই বলুক যে সে তিন লাখ টাকার এক টাকা কম নিয়ে অফিস ত্যাগ করবে না কিংবা মহাজনকে আর টাকা দিবে না- কোনো কিছুরই পরিবর্তন হয় না। বরঞ্চ ওরা যেমন যেভাবে যা চায়, তাই হচ্ছে। তাহলে সাজ্জাদ কি এখানে শোষিতের রিপ্রেজেন্টেটীভ? কে জানে, এই সব আভাস পরিচালক দিয়ে গেছেন, কোনোটাই বেশি দূর টানেননি, কারন সাজ্জাদের দুঃখ কষ্টের সামনে এই সমস্ত কিছুই “বাআআআল”। আপনার কি মনে হয়, এই জন্যই কি দুই দুইবার সাজ্জাদের খোড়া পায়ে পানি ঢালার দৃশ্য দেখানো হয়েছে? অথবা, সাজ্জাদ কেন খোড়া তার কি কোনো ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব? সম্ভব, যদি আপনি পুরো সমাজ ব্যবস্থা কে একটা লাঠি ভাবেন, তবে দিনের পর দিন সাজ্জাদ আঘাত পেতে পেতে স্থায়ি ভাবে খোড়া হয়ে গেছে। এই রূপক টা আমার ব্যক্তিগত ভাবে খুবই যুক্তিগ্রাহ্য মনে হয়েছে। ঠিক একই কারনে এই সিনেমার সবচেয়ে সুন্দর দুইটা দৃশ্যর যথাযথ সর্বোচ্চ ব্যবহার সম্ভব হয়েছেঃ একটি রাশিয়ার ভিসার টাকা জমা দিয়ে বাসায় এসে পরেরদিন বাইরে তুষারপাত হতে দেখা, অন্যটি রেহানার গর্ভপাতের কথা শুনে পেছনের সিটে নিজের কল্পিত মেয়ে কে দেখা। এটা উইস্ফুল থিংকিং, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট, ড্রিম সিকোয়েন্স নাকি সুররিয়াল কোনো প্রজেকশন? নাকি এটা রিয়ালিটির একটা কড়া জবাব, একটা ভীষণ কাউন্টার রিয়ালিটি? আবার এও ভাবতে পারেন, সিস্টেম কিভাবে মাইকেল আর সাজ্জাদ কে ডিস-ফাংশনাল করে ফেলেছে? সাজ্জাদ ডিসফাংশনাল হতে হতে কেন শেষে প্রায় একজন অমানুষে পরিণত হয়? লাইভ ফ্রম ঢাকা যদি হয় একটা দোযখ তবে সেই দোযখের লেয়ার কয়টাঃ শেয়ার মার্কেটে লুটপাট, মাদকাসক্ত ছোটভাই, সুদখোর মস্তান পাওনাদার, বান্ধবী ইস্যু, রাশিয়ার ভিসা, মালয়েশিয়ায় অবৈধ ভ্রমণ ইত্যাদি ইত্যাদি। তো, এই দোজখ কে বানালো, জান্নাত টাই কোন দিকে? এই সব কিছুই আপনাকে ভাবায় কিনা? এটাই হয়তো লাইভ ফ্রম ঢাকা থেকে ব্রডকাস্টেড একটা মেসেজ।
তাই সিনেমার শেষ দৃশ্যে যদি আপনার মনে হয়, কি ব্যাপার, শেষ তো হলো না, কেটে দিলো কেনো? ধরে নেবেন, গল্পটা এরকমই ছিলো যে এটা চলমান- A to B নয় বরংA থেকে শুরু হবে, কোনোদিনোZ এ পৌছাতে পারবে না। ঠিক এই কারনেই রিপিটেটিভ সেটিং- বারংবার একই জায়গায় ঘুরপাক, একই রুটিন, একই পরিণতি!অথবা আরেকভাবেও দেখতে পারেন, যখন সাজ্জাদ দেখলো সমাজ রাশট্র কোনোটাই তাকে কাংখিত মুক্তি দিচ্ছেনা, সে সিস্টেমের ভেতরের ডিস্কোর্সে অংশ নেয়, অর্থাৎ সেও রেহানার সাথে বিট্রে করে যেভাবে রাশিয়া যাওয়ার ১ লাখ টাকা ধরা খায় কিংবা পাওনাদার ধারের থেকে বেশি সুদ আদায় । সেও দুষ্ট চক্রে ঢুকে পড়ে। সাজ্জাদ যতখন সাজ্জাদ থাকছে ততখন লাইভ ফ্রম ঢাকা ততখন ভ্যালিড। যখনি সাজ্জাদ বুঝলো, আমাকে রক্ষা করার দায়িত্ব কেবলই আমার। তাই, তখনি আমার মনে পড়ে, মাইকেলের একটি সংলাপ পুরো সিনেমাকে সামারাইজ করেঃ “তোমার আমার ব্যাসিক ডিফারেন্স কি জানো? আমি যা,আমি তাই। তুমি যা না, তা হইতে চাও*” এই ডিফারেন্স শেষ পর্যন্ত সাজ্জাদ রাখতে পারে না, আর এটাই বর্তমানে লাইভ ফ্রম ঢাকা, এটাই কি ঘটছে না?
পুরো সিনেমা যে বিষয়টা ভালো লাগে নাইঃ সবকিছু ছড়ানো ছিটানো, কোনো ইস্যুই সাজ্জাদের সামনে বেইল পায়নাইকা, সবই “বাআআআল”। গাড়ি পোড়ানো, শেয়ার মার্কেট, অবৈধ অভিবাসন ব্যবস্থা- কিচ্ছুই লম্বা হইতে পারে না সাজ্জাদের “বাআআলের” সামনে। হইতে পারে এইটা সাদ সাহেব ইচ্ছা কইরাই করসে যাতে সাজ্জাদ যে স্ক্যাটার্ড সেইটার একটা ভিজুয়াল প্রদর্শনী হয়(এটা দূর্বল ডিফেন্স) অথবা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এর থেকে বেশি এক্সপ্লিসিট কিছু দেখানো সম্ভব না, ঝামেলা আছে। হয়তো আগের যে রিপ্রেসিভ রাষ্ট্রে মানুষ এমনি ফিল্টার্ড সিনেমা বানাতো। তাই দর্শকের পক্ষে অনেক সময় মনোযোগ কই দিবো- ব্যাক্তির উপর নাকি ব্যাক্তি যে কারনে এমন করছে তার উপর-এই ফিলিংস আসতে পারে। শব্দ নিয়ে অনেকে অভিযোগ করেছেন, আমার কাছে ব্যাপারটা অকে তবে কোনো মনে রাখার মতো গান নাই এই ব্যাপারটা দুঃখজনক।

শেষে, দুর্দান্ত সিটি স্কেপে ডিসটোপিয়ান এক মঞ্চে চরিত্রগুলোর মর্মভেদি সংলাপ আর তুষারপাতের সেই তুরীয় সিনেমাটিক শটের কারনে সাদ সাহেব ইজ গোইং টুবি গ্রেট। যখনি শুনলাম এটা সাদ সাহেবের প্রথম সন্তান, এরপর আসলে কথা চলে না। লেট সাদ সাহেব লিভ, লেট হিম লাইভ এগেইন উইথ এনাদার কাইন্ড অফ ফিল্ম!

একনজরে লাইভ ফ্রম ঢাকা


ধরন            :ড্রামা, সামাজিক, স্যাটায়ার
পরিচালক    :আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সা'দ
লেখক         :আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সা'দ
অভিনয়ে     :মোস্তফা মনোয়ার, তাসনুভা তামান্না
স্থান/ভাষা    :বাংলাদেশ, বাংলা
দৈর্ঘ্য           :৯১ মিনিট
মুক্তিকাল     :২৯শে মার্চ, ২০১৯ (বাংলাদেশ)

Comments

Popular posts from this blog

"দেবী" (২০১৮) : জয়া প্রযোজক প্রথমবার নিয়ে কিছু আলাপ,ফিরে দেখা,চেক ব্যাক

ভারত অস্কারে পাঠাচ্ছে গালিবয়ঃ সেরা সিনেমা বনাম ফিল্ম সার্কিট পলিটিক্স